‘বাফুফের ভবনের চারতলায় মেয়েদের রাখা হয়েছে, এটা যেন একটি বন্দিশালা’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের চারতলায় দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের আবাসিক ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে, যা থেকে দেশের নারী ফুটবলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে, সেখানে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ডালিয়া আক্তার।

আজ সকালে বাফুফে ভবনের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে ডালিয়া বলেন, ‘বাফুফে ভবনের চারতলায় মেয়েদের রাখা হয়েছে যেন এক ধরনের বন্দিশালা। তাদের কী খাওয়ানো হচ্ছে, তা জানার সুযোগ নেই এবং তাদের কথা বলার অধিকারও নেই। তবে একদিন তারা এই ভবন থেকে বেরিয়ে এসে সত্যটা প্রকাশ করবে।’

সমাবেশটি ‘বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল খেলোয়াড়-কর্মকর্তাবৃন্দ’-এর ব্যানারে আয়োজিত হয়, যেখানে ডালিয়া বিশেষভাবে সোচ্চার ছিলেন। তিনি একসময় বাংলাদেশ হ্যান্ডবল দলেরও অধিনায়ক ছিলেন।

২০০৮ সালে ফুটবল ও হ্যান্ডবল জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা ডালিয়া বলেন, ‘বাফুফের ক্যাম্পে থাকা মেয়েরা ছোট, তাই আওয়াজ তুলতে ভয় পায়। এক মেয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কেন বারবার পাঙাশ মাছ খাওয়ানো হচ্ছে, এজন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, কিন্তু সত্য চাপা রাখা যায় না, একদিন তা প্রকাশ হবেই।’

বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন এবং নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের উদ্দেশে ডালিয়া বলেন, ‘তারা বাফুফেতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন এবং পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। এখন সময় এসেছে তাদের বিদায় নেওয়ার এবং যোগ্যদের সুযোগ দেওয়ার। কেন মেয়েদের সব দলের ম্যানেজার হিসেবে একজন ব্যক্তিকেই (আমিরুল ইসলাম বাবু) বারবার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্নও তিনি জোরালোভাবে তুলেছেন।’

ডালিয়া আরও বলেন, ‘জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক থাকার পরও আমাকে নারী ফুটবলের কোনো কার্যক্রমে রাখা হয়নি। তারা সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মাহফুজা আক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি চেয়ারের প্রতি আসক্ত, আর কিছু করেন না। আমাদের মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠানো হয়নি, কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন? এবার পদ থেকে সরে যান।’

সমাবেশের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কামরুন নাহার ডানা, যিনি বাংলাদেশের নারী ফুটবল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশন যেন সালাহউদ্দিন-কিরণের ফেডারেশন হয়ে উঠেছে। উনি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করেননি। বাফুফেতে রাজনৈতিকীকরণ ও দুর্নীতি হয়েছে। যারা কাউন্সিলর হয়েছিলেন, তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমরা ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে পরিবর্তন চাই এবং আশা করি বাফুফে নতুনভাবে গঠন করা হবে।’

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ২৫ থেকে ৩০ জন সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক, এবং নারী ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *