বাংলাদেশ নিয়ে নিজের মন্তব্যে অনড় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা ও দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে নিজের মন্তব্যে অনড় রয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন, জেনেই বলেছেন। মমতার দাবি, তার বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত করেছে বিজেপি। তিনি নিজের মন্তব্য থেকে কোনোভাবেই পিছু হটছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘যা বলেছি ঠিক বলেছি, আমাকে যেন শেখাতে না আসে।’

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘আমি সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মন্তব্য করবো না। কিন্তু আমি যেটা বলেছি, তা হলো, কেউ যদি আশ্রয় চাইতে আমার সীমান্তে আসে, আমি অবশ্যই সাহায্য করবো। আমাদের বহু মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছেন। তাদের পাসপোর্ট-ভিসা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষ পশ্চিমবঙ্গে আসেন, পড়াশোনা করতে, চিকিৎসা করাতে। আমি সেই জায়গা থেকেই বলেছি, সমস্যায় পড়ে কেউ আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে এলে আমরা পাশে থাকবো। এটি সোজা কথা, এর পেছনে অন্য কোনো অর্থ নেই।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। তারা আমাদের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা সাহায্য করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। আবার বাংলাদেশের অনেক মানুষও এখন এ রাজ্যে রয়েছেন চিকিৎসার জন্য। তারাও তো ফিরতে চান তাদের দেশে। আমি কি তাদের না বলবো? তাদেরও পাসপোর্ট-ভিসা সব রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘আমি খুব সাধারণ কথাই বলেছি। কিন্তু আমার বক্তব্য বিকৃত করেছে বিজেপি, বাংলাদেশেও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

তার মন্তব্য ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থি কি না প্রশ্ন করা হলে মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘আমি সাতবার সংসদ সদস্য ছিলাম, দু’বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলাম। অন্য যে কারও চেয়ে পররাষ্ট্রনীতি ভালো জানি। আমাকে এসব শেখাতে হবে না।’

কী বলেছিলেন মমতা  ব্যানার্জী

গত ২১ জুলাই এক সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারি না, যা বলার ভারত সরকার বলবে। তবে বাংলাদেশের কোনো অসহায় মানুষ যদি পশ্চিমবঙ্গের দরজায় কড়া নাড়ে, তাহলে আমি নিশ্চয় তাদের আশ্রয় দেবো। কারণ, জাতিসংঘের নিয়ম রয়েছে, অস্থিরতার কারণে কেউ উদ্বাস্তু হলে পাশের এলাকা তাকে আশ্রয় দেবে।’

মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, শরণার্থীদের বিষয়ে জাতিসংঘের নির্দেশিকা মেনেই রাজ্য সরকার যা করার করবে। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের প্ররোচনা বা উত্তেজনা সৃষ্টি না করার আবেদন জানান তিনি। এসময় বাংলাদেশের সহিংসতায় নিহতদের প্রতি সমবেদনাও জানান মমতা ব্যানার্জী।

তবে মমতার ওই মন্তব্যকে সহজভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে আমাদের খুবই ঘনিষ্ঠ ও উষ্ণ সম্পর্ক৷ তার প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, এই মন্তব্যে নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগও জানায় বাংলাদেশ।

অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মমতাকে মনে করিয়ে দেয়, পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই অন্য রাষ্ট্রের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাদে আর কেউ মন্তব্য করতে পারে না।

যদিও সেই সতর্কতা কার্যত উড়িয়েই দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে তিনি কোনো এখতিয়ারবিরোধী মন্তব্য করিনি, যা বলেছি জেনে-বুঝেই বলেছি।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য ওয়াল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *