বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্রদের গুলি করে পঙ্গু করে দেয়ার পর তাদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া ও মায়া কান্না এবং সাহায্য করবার কথা বলা জনগণকে প্রতারণা করার আর একটি নজীর। এই সরকারকে বলবো-সকল হত্যার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ এবং দেশের মানুষকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদেরকে হত্যা, গ্রেপ্তার, গুলি করে আদালতে উঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারো নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেখানে রিমান্ডের ন্যূনতম আইন মানা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, গ্রেপ্তারকৃতদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনি রচনা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকেও ব্লক রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আইডি কার্ড দেখামাত্রই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে গুম করে কিভাবে নির্যাতন করে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে তা তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই অনুধাবন করা যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার প্রথম থেকেই সরকারি গুন্ডাবাহিনীকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে লেলিয়ে দেয়। তারা এতই রক্ত পিপাসু হয়ে গেছে আরও কেন হতাহত ও আরো বেশি রক্তপাত হলো না কেন এর দায় এবং ব্যর্থতায় বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে, যা রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে সরকার প্রধানসহ আওয়ামী নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক কল্পকাহিনি রচনার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরছে, কিন্তু দেশের জনগণ তা বিশ্বাস করে না। আমি তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারের মিথ্যা প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, শুক্রবার গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুকে আদালতে রিমান্ড শেষে নিয়ে আসার সময় যে চিত্র এসেছে তা যে কোন বিবেকবান মানুষকে আলোড়িত করবে। রিমান্ডে এমন ভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে যে তিনি দাঁড়াতেই পারছে না।
মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে অবৈধ সরকার। কোটা আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। এই ধরনের বর্বরোচিত অমানবিক কাজ পুরো সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
ফখরুল বলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে এবং রাতভর নির্যাতন চালায়। তারপর সাঈদ খানকে মেট্রোরেল পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। কয়েকদিন পূর্বে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নয়াব আলীর একটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে।
আর এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন জাতীয় নেতা ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে। শুক্রবার যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসায় তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে তার ভায়রা, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. মোর্শেদ হাসান খানসহ অসংখ্য মানুষের বাড়ি বাড়ি ডিবি পুলিশ তল্লাশি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেহারা কি বীভৎস রূপ ধারণ করেছে সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে। সরকারি বাহিনীর হাতে মাত্র এক সপ্তাহে চার সাংবাদিক হত্যা এবং দুই শতাধিক সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার না করে প্রতিবাদী সাংবাদিক নেতা সাঈদ খানকে গ্রেপ্তার সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের একটি কু-নজির।
সরকারের প্রতিহিংসা থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এ সরকারের আমলে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিককে প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরিত হতে হয়েছে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।