দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট
দেশপ্রেম এক বিশাল দায়িত্ববোধ এবং ত্যাগের অনুভূতি, যা কেবলমাত্র আবেগে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা, যা কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেম প্রায়শই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। যারা দেশের হাল ধরছেন, তাদের অনেকেই নিজের আখের গোছানোর ধান্দায় মগ্ন, দেশের প্রকৃত কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা কিংবা সদিচ্ছার অভাব লক্ষণীয়।
আজ আমরা এমন একটি পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে ক্ষমতার লড়াই এবং দলীয় স্বার্থ দেশের অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠেছে। এই সংকট শুধু আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে থামিয়ে দিচ্ছে না, বরং আমাদের সমাজকে বিভক্ত করছে। দেশপ্রেমের অভাব, বিভাজনের রাজনীতি, এবং বৈষয়িক স্বার্থে মগ্নতার কারণে জাতি হিসেবে আমরা আজ পিছিয়ে পড়ছি।
দেশপ্রেম মানে কেবল দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বলা বা জাতীয় দিবসগুলোতে পতাকা উত্তোলন নয়। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে দেশকে সর্বাগ্রে রেখে তার উন্নয়নে কাজ করা হয়। এর অর্থ হলো ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, দেশের জন্য এমন কিছু করা যা সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে।
কিন্তু আমরা কি সত্যিই দেশকে ভালোবাসি? যারা আজ দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দলীয় সংঘর্ষে জড়ায়, চাঁদাবাজি করে, এবং ক্ষমতা দখলের জন্য সহিংসতায় মেতে ওঠে, তারা কি সত্যিই দেশপ্রেমিক? প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা কখনোই দেশের মানুষের শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশকে ভালোবাসা মানে কেবল আবেগপ্রবণ স্লোগান দেওয়া নয়; এটি দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি এমন এক দায়িত্ব, যা দেশের প্রতিটি নাগরিক, রাজনীতিবিদ এবং নেতার উপর সমানভাবে বর্তায়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জুলাই-আগস্ট বিপ্লব আমাদের একটি বড় শিক্ষা দিয়েছে। এই বিপ্লব ছিল একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, যা আমাদের দেখিয়েছে, দেশের জন্য সবাই একত্রিত হলে কতটা অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই বিপ্লবের পরে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে কাজ করার পরিবর্তে পুনরায় ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরে, দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর পরিবর্তে, আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পুরনো বিরোধিতা এবং ক্ষমতার দৌড় প্রতিযোগিতা।
যদিিএই সময় সবাই একত্রিত হয়ে দেশের পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করা যায়, তবে বাংলাদেশ হয়তো একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনুস একটি স্থিতিশীল, টেকসই এবং উন্নয়নমুখী দেশ গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সরকার একটি জনমুখী এবং প্রগতিশীল নীতিমালা তৈরি করতে কাজ করছে। কিন্তু এই প্রয়াসে বাধা সৃষ্টি করছে দেশের ভেতরে থাকা রাজনৈতিক বিভাজন এবং দলীয় স্বার্থ।
ড. ইউনুস একজন বিশ্বস্বীকৃত ব্যক্তিত্ব, যার নেতৃত্বে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করতে পারতাম। তার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আজ রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
যদি দেশের সব রাজনৈতিক দল তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করত, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হতো। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভাজনের রাজনীতি এবং ক্ষমতার লড়াই দেশের এই অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা আজ এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ক্ষমতার লড়াই এবং রাজনৈতিক বিভক্তি শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমাদের অবস্থানকে দুর্বল করে তুলছে।
আমাদের নেতারা যখন নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন পাশের দেশগুলো এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। এটি শুধু আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার হুমকি সৃষ্টি করে।
রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে তুছেছে। পাশের দেশের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এবং তাদের প্রভাব মেনে নেওয়ার প্রবণতা আজ আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনকল্যাণকে সামনে রেখে একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকর রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
For your online Shopping: SOTUT BAZAR , Visit Sogut Bazar Website: Sogutbazar.com.bd
দলীয় সংকীর্ণতা ত্যাগ করা:
রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে।
তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়ন:
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত তৃণমূল পর্যায়ে সবার কাছে উন্নয়ন এবং সেবা পৌঁছে দেওয়া।
বৈষম্য দূর করা:
সমাজে বৈষম্য দূর করতে হবে। এতে জাতীয় ঐক্য এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা:
দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুব সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা:
দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
একটি জাতির শক্তি তার ঐক্যের মধ্যে নিহিত। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিভক্তি এবং সামাজিক অস্থিরতা আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
এখন সময় এসেছে এই বিভাজনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে ঐক্যের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করার। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত এই ঐক্য প্রয়োজন।
দেশপ্রেম কেবল কথার বিষয় নয়, এটি কাজে প্রমাণ করতে হয়। আমাদের রাজনীতিবিদ এবং নেতাদের প্রতি আহ্বান থাকবে—দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থে কাজ করুন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লব আমাদের দেখিয়েছে, একতা থাকলে আমরা কীভাবে অসাধ্য সাধন করতে পারি। সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এই দেশ আমাদের সবার। দেশের জন্য কাজ করলে শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপকৃত হবে। দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাপূর্ণ করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। এখনই সময় একত্রিত হয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, দেশের জন্য কাজ করার।
লেখক: মো. আশরাফুল ইসলাম

আরও দেখুন: ২০২৫ সালের অঙ্গীকার: ভারতীয় পণ্য বর্জনের অগ্রাধিকার
২০২৫ সালের অঙ্গীকার: ভারতীয় পণ্য বর্জনের অগ্রাধিকার
নতুন বছর মানেই নতুন প্রতিজ্ঞা, নতুন লক্ষ্য। ২০২৫ সালে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার—ভারতীয় পণ্য বর্জন। এটি শুধুমাত্র একটি স্লোগান নয়, বরং আমাদের জাতীয় স্বার্থে একটি অপরিহার্য প্রয়োজন। এই প্রতিজ্ঞা আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
ভারতীয় পণ্য আমাদের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। ফলশ্রুতিতে, আমাদের দেশীয় শিল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়ছে। ভারতীয় পণ্য কিনে আমরা শুধু তাদের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াচ্ছি না, বরং আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিদেশে স্থানান্তর করছি। এর ফলে আমাদের নিজেদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে এবং দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ভারত বিভিন্ন সময়ে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি দাম্ভিক আচরণ প্রদর্শন করেছে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের একতরফা নীতি এবং দাদাগিরির মনোভাব আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে র্পূবে সব সময় আঘাত করেছে। তাই, তাদের অর্থনৈতিক আধিপত্য থেকে মুক্তি পেতে ভারতীয় পণ্য বর্জন অপরিহার্য।
আমরা প্রতিজ্ঞা করতে পারি, যতটা সম্ভব দেশীয় পণ্য ব্যবহার করবো। স্থানীয় কৃষক, কারিগর এবং উদ্যোক্তাদের থেকে পণ্য কিনে তাদের উৎসাহিত করবো। এটি শুধু অর্থনৈতিক লাভ নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের আত্মনির্ভরশীল করবে।
যদি কোনো পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন সম্ভব না হয়, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বাজার থেকে সেই পণ্য আমদানি করা যেতে পারে। চীন, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো আমাদের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে। এভাবে আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করেও আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারি
সরকার ও ব্যক্তিগত খাতের উদ্যোগে স্থানীয় শিল্প এবং উৎপাদন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার বিস্তার, শিল্প খাতের আধুনিকায়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে আমরা নিজেদের পণ্য উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন করতে পারি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল, প্রণোদনা, এবং বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা প্রদান করতে হবে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নীতি সহায়তা এবং উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।

দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট। দেশপ্রেমের সংকট ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা: বর্তমান প্রেক্ষাপট।
