একনায়কত্বের ষোলো বছর: অনৈতিকতার বিষবৃক্ষ ও জাতির নৈতিক সংকট
বাংলাদেশ গত ১৬ বছরে এক অন্ধকার যুগের মধ্যে দিয়ে গেছে, যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে অনৈতিকতা, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, খুন, ধর্ষণ ও রাহাজানির সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্র কেবল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য দমন-পীড়ন চালায়নি, বরং দেশকে এক নৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। এই দীর্ঘ শাসনকালে এমন একটি জাতি তৈরি হয়েছে, যারা ন্যায়-অন্যায়ের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

দেশের শাসনব্যবস্থায় গুম, খুন, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছিল। ফলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাক্ষেত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় এক চরম নৈতিক অবক্ষয় নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে, কারণ ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন না থাকলে সমাজ অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়।
নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা ও বিকাশ
স্বৈরাচারী শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করা এবং জনগণের মধ্যে অনৈতিকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের সমাজে যে ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অনৈতিকতা প্রবেশ করেছে, তা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়।
For your online Shopping: SOTUT BAZAR , Visit Sogut Bazar Website: Sogutbazar.com.bd
গুম-খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি
বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের হার ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ মানুষ—কেউই নিরাপদ ছিল না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধীদের নিপীড়ন করা হয়েছে এবং এসব অপরাধের কোনো বিচার হয়নি, যার ফলে সেই অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষের বেরিয়ে আসতে সময় লাগছে।
আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকলে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে, অপরাধ করেও পার পাওয়া সম্ভব। ফলে সমাজের নিচের স্তরেও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এখন দেখা যায়, সামান্য পারিবারিক বিরোধেও খুনোখুনি হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই প্রকাশ্যে মানুষ খুন করা হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষকে ন্যায়বিচার থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে, ফলে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, সহিংসতা এবং খুন-খারাবির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির উত্থান
দুর্নীতি বাংলাদেশে এক প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পতিত স্বৈরাচার আমলের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা পর্যন্ত দুর্নীতিকে নিজেদের অধিকার মনে করেছিলো। ব্যাংক লুটপাট, বড় প্রকল্পে দুর্নীতি, সরকারি টেন্ডার বাণিজ্য, জমি দখল—এসব অনিয়ম নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা থেকে বেরিয়ে আসতে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
বড় বড় দুর্নীতির পাশাপাশি ছোটখাট দুর্নীতিও সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এখন ঘুষ না দিলে কোনো কাজ করাতে পারে না। ফলে দুর্নীতিকে অনেকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও বেশি নীতিহীন করে তুলবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতার অবক্ষয়
শিক্ষা একটি জাতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু গত ১৬ বছরে শিক্ষা খাতেও চরম দুর্নীতি, অনিয়ম নৈতিকতাহিন শিক্ষনীতি ও সকল দলীয়করণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় আনুগত্যই মূল যোগ্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেধার মূল্যায়ন ছিল না, ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।
প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, পরীক্ষার ফল পরিবর্তন, মেধাবীদের দমিয়ে রাখা—এসবের ফলে শিক্ষাঙ্গনে নৈতিকতা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল। যে প্রজন্ম প্রশাসন ও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে, তাদের দ্বারা দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব কি করে?
For your online Shopping: SOTUT BAZAR , Visit Sogut Bazar Website: Sogutbazar.com.bd
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের উল্লম্ফন
একজন স্বৈরশাসকের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজের দুর্বল অংশ, বিশেষত নারী ও শিশু। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে।
ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিচারহীনতার কারণে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধীরা জানে, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে, ফলে তারা নির্বিঘ্নে এসব ঘৃণ্য অপরাধ করে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা উঠে আসছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। ফলে সমাজের ভেতরে একটি ভয়ঙ্কর বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।
চুরি, ডাকাতি, খুন-রাহাজানি বৃদ্ধি
নৈতিকতার অবক্ষয়ের ফলে দেশে অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যখন রাষ্ট্রপ্রধান ও তার অনুগতরা জাতির সম্পদ লুটপাট করেছে, তখন সাধারণ মানুষও অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথে হাঁটছে। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগছে, যার ফলে দেখা যাচ্ছে:
চুরি ও ডাকাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্য বেড়েছে।
খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এই অপরাধগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ অপরাধীরা জানে, এই অপরাধগুলো ঘটলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হবে এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে তারা ফুসে উঠবে।
নীতিহীন জাতির ভবিষ্যৎ কী?
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের গত ১৬ বছরের দুঃশাসনের ফলে বাংলাদেশ এক চরম নৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশের জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ যে চরম নৈতিক সংকটে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় পরিবর্তন দরকার। শুধুমাত্র সরকার পরিবর্তন দিয়ে হবে না, বরং জনগণের সচেতনতা এবং ন্যায় ও সত্যের পথে চলার মানসিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে সেই সাথে নৈতিক শিক্ষার দিকে জোর দিতে হবে। অন্যথায় এই নৈতিক অবক্ষয় ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে, যা জাতির অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলবে।
-লেখক: মো. আশরাফুল ইসলাম

আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মী ভাইদের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
প্রিয় ভাইয়েরা,
ইতিহাস আমাদের সামনে সব সময় একটি আয়নার মতো থাকে, যা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা বারবার একই ভুল করি এবং ইতিহাসের সেই আয়নায় নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে ব্যর্থ হই। আজ যারা হঠাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দিশেহারা, হতাশ, কিংবা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন—তাদের বলছি, শান্ত হন। বাস্তবতাকে মেনে নিন এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ও পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।
আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, আমরা বুঝি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আপনারা একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন। দল আপনাদের বলেছে, শেখ হাসিনাই এই দেশের রক্ষক, শেখ হাসিনাই উন্নয়নের প্রতীক। আপনাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে যে, এই দল ও নেত্রী ছাড়া বাংলাদেশ চলবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলছে? কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে নেত্রী আপনাদের বিপদের মুখে ফেলে নিজে পালিয়ে গেছে।
সত্য হলো, শেখ হাসিনা ছিলেন একজন একনায়ক। তিনি গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চালিয়েছেন, নিজের স্বার্থকে রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখেছেন। যার ফলে তার শাসনামলের পরিণতি হয়েছে লজ্জাজনক পতন।
শেখ হাসিনার ভুল ও তার পতনের কারণ:
তিনি জনগণকে প্রতারিত করেছেন
একজন নেতার প্রধান দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কিন্তু শেখ হাসিনা জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন, তাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কষ্ট পাচ্ছিল, যখন দেশে বেকারত্ব বাড়ছিল, যখন ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হচ্ছিল, তখন তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখাতেন, ‘সবকিছু ঠিক আছে!’
গণতন্ত্র হত্যা করেছেন
তিনি কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন, দিনের ভোট রাতে করেছেন। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা—সবকিছু দলীয়করণ করেছেন। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া বারবার ক্ষমতায় বসেছেন। এমন একনায়কতন্ত্র বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না, সেটাই হয়েছে।
লুটপাট ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন
তাঁর দল ও পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেছে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, ব্যাংক লুট হয়েছে, মানুষের কষ্টের টাকা চুরি হয়েছে। অথচ জনগণকে বলা হয়েছে, ‘উন্নয়ন হচ্ছে!’
প্রশাসনকে অস্ত্র বানিয়েছেন
পুলিশ, র্যাব, প্রশাসনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম-খুন করা হয়েছে। এই দমন-পীড়নের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত তাকে রক্ষা করতে পারেনি।
বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন
তিনি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন, বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু যখন সময় এলো, তার প্রভুরা তাকে বাঁচাতে আসেনি। ইতিহাস বলে, বিদেশিরা কখনো নিজের স্বার্থের বাইরে কাউকে সাহায্য করে না। শেখ হাসিনা সেটাই বুঝতে পারেননি।
এখন যারা তার অনুগত কর্মী ছিলেন, তারা হতবিহ্বল। হঠাৎ এভাবে সবকিছু পাল্টে যাবে, ভাবতে পারেননি। কিন্তু এটাই স্বৈরশাসনের চিরন্তন পরিণতি।
আপনাদের জন্য করণীয় কী?
আবেগ নয়, বাস্তবতাকে মেনে নিন
হাসিনার পতন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করলে চলবে না। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে হবে। বিস্তারিত দেখুন…