ইসলামী ব্যাংকে অস্থিরতা, পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে গভর্নরকে চিঠি

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার জন্য ব্যাংকটির শতাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে একটি চিঠি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে চিঠিটি জমা দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল চুরির যে তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, বাস্তবতা তার চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই চুরির কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা কমে গেছে। তাই দ্রুত পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা, সব অংশীদারের স্বার্থ রক্ষা করা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন। সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।

২০১৭ সালে আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা এস আলম গ্রুপকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সাড়ে সাত বছরে, এস আলম গ্রুপ ও রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে, যা ব্যাংকের মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করার সময় কোনো নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়নি, এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে এই টাকা বের করা হয়েছে। বর্তমানে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা যাচ্ছে না, ফলে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে ভুগছে এবং নিয়মিত জরিমানা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন, কিন্তু যারা ব্যাংকের দুরাবস্থা তৈরিতে দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এর চেয়ারম্যানের পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে এক মানববন্ধনে তাঁরা সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটিতে নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারকে ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়, এরপর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুখমিলা জামান। কিন্তু তিনি যুক্তরাজ্যে থাকার কারণে ব্যাংকটি পরিচালনা করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বোন রোকসানা জামান চৌধুরী গ্রহণ করেছেন, এবং এমডি আরিফ কাদরী ১৫ দিনের ছুটিতে বিদেশে গেছেন। ইউসিবির অতিরিক্ত এমডি এ টি এম তাহমিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ৩০ জুলাই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়েছে এবং এমডি আগামী মাসে দেশে ফিরবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *